রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। উৎসঃ https://media.assettype.com/bdnews-subsite%2Fimport%2Fbangla%2Fwp-content%2Fuploads%2F2019%2F10%2FRabindranath-Thakur-111-1170x600.jpg?w=1200&auto=format%2Ccompress&ogImage=true&enlarge=true
পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট গল্পটি লিখেছেন আর্নেস্ট হেমিংওয়ে। লেখাটি ছিল, “For sale: baby shoes, never worn.”
মাত্র ছয়টি শব্দে যেমন একটা গল্প লেখা যায়, আবার কয়েকশ কিংবা হাজারখানেক শব্দ দিয়েও গল্প লেখা যায়। তারমধ্যে কিছু গল্প খুব সাধারণ জীবনের কাহিনি ফুটিয়ে তোলে, কিছু মনে হাসির খোরাক জোগায় আর কিছু হৃদয়ের গভীরে গিয়ে আঘাত হানে।
বিশ্বসাহিত্যের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ছোটগল্পকার ও হেনরি। তার জিম ও ডেলা চরিত্র দারুণ বিখ্যাত।
বড়দিন উপলক্ষে জিমের সবচেয়ে দামী ঘড়ি বিক্রি করে ডেলার সুন্দর ঝলমলে চুলের জন্য কেনা সাজ-সরঞ্জাম উপহার দিতে গিয়ে চমকে উঠে। ডেলা তার সুন্দর চুলগুলোর বিনিময়ে জিমের ঘড়ির জন্য প্লাটিনামের চেন কিনে এনেছে।
সুন্দর ভালোবাসার গল্প।
আরেক গল্পে দেখা যায়, আইভি গাছ থেকে শেষ পাতাটা ঝরে পড়ার অপেক্ষায় মরণের প্রহর গুনতে থাকা জনসি’ শেষপর্যন্ত নিউমোনিয়া থেকে বেঁচে ফিরে। সব পাতা ঝরে গেলেও একটা পাতা আশ্চর্যজনকভাবে গাছের ডালে আটকে থাকে।
প্রতিটা ছোটগল্পের এরকম কিছু টুইস্ট থাকে। তারপর লেখক কাহিনি এগিয়ে নিয়ে শেষে গিয়ে গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দেন।
বনফুলের গল্প লেখার ভঙ্গিও সুন্দর।
সুলেখা কাঁদিতেছে। কেন কাঁদিতেছে তার কারণ যেমন লেখক সকৌতুকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
ঠিক তেমনি তিলোত্তমা নামক তেল-কালো এক অতি সাধারণ বালিকার বিয়ের পরের জীবনকাহিনিও তুলে ধরেছেন। তিলু খুব সাধারণের মধ্যে অসাধারণ একটা চরিত্র।
নাথুনির মা’য়ের মতো অনেক শাশুড়ি-মা এখনও দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু চিঠি পেয়ে অমিতার মতো প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে স্টেশনে পাঁচ মিনিটের দেখা পাওয়ার জন্য সারা প্রহর ধরে অপেক্ষারত কোনো যুবককে এখন খুঁজে পাওয়া যায় না।
দায়িত্ব-কর্তব্যের ভারে নুয়ে পড়া নিমগাছের শেকড় গভীরে প্রবেশ করার মতো প্রতিটা মানুষের বেঁচে থাকার অস্তিত্বের সাথে লড়াইয়ের সম্পর্ক ভেসে উঠে।
মানুষ তার প্রবৃত্তি থেকে কখনো দূরে সরে থাকতে পারে না। সেই তাড়না থেকে সে তার নিজের চাহিদাকে সবসময় চরিতার্থ করতে চায়। মানিক বন্দ্যাপাধ্যায়ের ভিখু, পাঁচী চরিত্র আমাদের কোনো এক মৌলিক সত্তার দিকে টেনে নিয়ে যায়।
হুমায়ূন আহমেদের ছোটগল্প তার নাটক কিংবা উপন্যাসের মতো সাদামাটা ধরনে লেখা।
ছুনু মিয়ার বদনজরের জন্য কালো চশমা পরিয়ে রাখা, সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য মনোয়ারার অসৎ পন্থা অবলম্বন করা; মুক্তিযুদ্ধে বউয়ের কথা না মেনে বাড়িতে আশ্রয়রত এক মিলিটারিকে মুক্তিযোদ্ধার হাতে তুলে দেয়ার মতো গল্প আছে।
অনেক লেখকের সুন্দর সুন্দর, অসাধারণ গল্প আছে। কিন্তু বাংলাসাহিত্যে ছোটগল্পের জাদুকর একজনই।
তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
যিনি গল্পে মানুষের মনের অন্তর্দ্বন্দ্ব, চিন্তাভাবনা, দুঃখ-কষ্ট থেকে শুরু করে সমাজের সর্বগ্রাসী প্রথাকে গভীরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তার প্রত্যেকটা গল্পই অনন্যসাধারণ।
ফটিকের গল্প পড়তে গেলে আমাদের চোখে পল্লীবাংলার এক কিশোর ছেলের ছবি চোখে ভাসবে। মনে হবে, পাশের গাঁয়ের একটা ছেলে যে একটা বন্দী শহরে ছটফট করতে করতে `এখন আমার ছুটি হয়েছে, মা’ বলে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে।
আবার যৌতুকের কবলে পড়ে নিরুপমার মরে যাওয়াটা আমাদের হৃদয় ব্যথিত করে। দুটো ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে উঠা, সবকিছু থেকে পৃথক দুটো মানুষ রতন আর পোস্টমাস্টারের বিচ্ছেদের ছবিও চোখে ভেসে উঠে।
ছোটবেলায় মৃন্ময়ী চরিত্রটা যেভাবে সবার প্রিয় হয়ে উঠে, সময়ের সাথে সাথে হরসুন্দরী, চারু চরিত্র তার চেয়ে মনে বেশী সাড়া দেয়।
সুভার মতো একটা বোবা সুন্দর মেয়েটা তার বিরুদ্ধে করা অপবাদের প্রতিবাদ করার কোনো উপায় পায় না। কিন্তু সেদিক থেকে কল্যাণী, চন্দরা চরিত্রে বেশ ভিন্নতা চোখে পড়ে।
দূর শহরে জীবিকার সন্ধানে আসা রহমতের ছোট্ট মেয়েটার প্রতি যে স্নেহ-ভালোবাসা, যা জেল থেকে ফেরার বহু বছর পরও টিকে থাকে।
কিন্তু একজন মরে যাওয়া মানুষকে আবার বেঁচে ফিরে পেয়ে হয়তো আনন্দের চেয়ে তা অনেক সময় দুঃখের কারণ হয়।