বইয়ের নামটার সাথে পুরো উপন্যাসটার পরতে পরতে যেন লেখক মায়াজাল বিস্তার করে রেখেছেন। ভিঞ্চি মানে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি!! বিশ্বখ্যাত এই চিত্রকর এর নাম বোধহয় কমবেশি সবাই শুনেছে।
তিনি বিখ্যাত তার লা-জকোন্দা বা AMONLISA বা O Lame Saint!! এর জন্য। বুঝতে কষ্ট হচ্ছে তাইনা! এই তিনটা নামই আমাদের সুপরিচিত একটা বিখ্যাত চিত্রশিল্পকে ইঙ্গিত করে। মোনালিসা!
লা জকোন্দা’ মোনালিসা’র ফরাসি নাম আর বাকি দুটো অ্যানাগ্রাম (কোনো বর্ণ বা বাক্যাংশের স্হান পরিবর্তন করে ভিন্ন ভিন্ন শব্দ বা বাক্য তৈরি করাকে অ্যানাগ্রাম বলে)।
তাহলে কি কোডটা রহস্যময় হাস্যজ্জ্বল মোনালিসা’কে ঘিরেই নাকি অন্য কোনো রহস্য ভীড় করছে সেই কোড’কে ঘিরে, তা জানতে হলে আমাদেরকে সদর দরজা পেরিয়ে আরেকটু ভিতরের দিকে প্রবেশ করতে হবে।
প্যারিসের ল্যুভর মিউজিয়ামে ৬৫,৩০০ শিল্পকর্ম ভালোমতো দেখতে হলে পাঁচ সপ্তাহ সময় লাগলেও বেশিরভাগ পর্যটক সেটাকে সংক্ষিপ্ত করে বেছে নেয় তিনটা বিখ্যাত বস্তুর মধ্য দিয়ে; মোনালিসা, ভেনাস দ্য মিলো এবং উইঙ্গ ভিক্টোরি।
প্যারিসের বিখ্যাত ল্যুভর মিউজিয়ামে মোনালিসা থেকে কয়েক গজ দূরে একজন ছিয়াত্তর বছরের বৃদ্ধ কিউরেটর, জ্যাক সনিয়ে, উলঙ্গ হয়ে পড়ে রয়েছেন। যিনি খুন হওয়ার আগে নিজেকে সাজিয়েছেন ভিঞ্চির ভিটরুভিয়ান ম্যান হিসেবে। যার হাত-পা ঈগল পাখির মতো ছড়িয়ে পড়ে আছে ল্যুভর’র শৈল্পিক মেঝেতে।
তার বুকের পাঁজরের ঠিক নিচেই একটা ছোট ফুটো, উপরে নিজের রক্তে আঁকা একটা পেনটাকল বা পাঁচকোণা তারা। যা প্রাকখৃষ্টীয় প্রতীক এবং প্রকৃতিপূজার সাথে সম্পর্কিত।
পেনটাকল দেবী ভেনাস কিংবা গ্রহ ভেনাসের প্রতীক। ভেনাস প্রতি আট বছরে আকাশে যে অবস্থান পরিবর্তন করে সেটা পেনটাকলের’ই আকৃতি।
মারা যাওয়ার আগে স্টাইলাস কলমে ফ্লুরোসেন্ট কলমের কালিতে তার লেখা একটা অবিন্যস্ত ফিবোনাচ্চি সংখ্যাক্রম আর দু লাইনের অ্যানাগ্রাম!
তার নিচে পি.এস, রবার্ট ল্যাংডর্নকে খুঁজে বের করো’ এই বার্তার মধ্য দিয়ে হারভার্ডের সিম্বোলজিস্ট রবার্ট.ল্যাংডর্নকে ঘটনাচক্রে যুক্ত করে যেন গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া হয়।
পি.এস মানে কিউরেটরের প্রিয় নাতনি ক্রিপ্টোগ্রাফার প্রিন্সেস সোফি নাকি দু’হাজার বছরের পুরনো কোনো এক ভ্রাতৃসংঘের সংগঠন ‘প্রায়োরি অব সাইওন!! যে সংগঠন এমন এক সত্যকে সহস্রাব্দ ধরে বহন করে চলেছে, যেটা প্রকাশ পেলে কোনো এক ধর্মের ভিত কেঁপে উঠবে।
যেই ভ্রাতৃসংঘের সদস্য ছিলেন বত্তিচেল্লি, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, স্যার আইজ্যাক নিউটন, ভিক্টর হুগো, উইলিয়াম শেকসপিয়র, মোজার্ট, বেথোফেনের মতো সব বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব।
যে সত্যকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য ধর্মীয় সংগঠন ‘ওপাস দেই’র প্রেসিডেন্ট আরিঙ্গারোসা, তার অনুগত সাইলাসকে নিযুক্ত করেছে। অন্যদিকে টিচার’ নামের কোনো এক অদৃশ্য শক্তি যেন পর্দার আড়ালে থেকে সবকিছুর কলকাঠি নাড়ছে।
যে কারণে একইদিনে ভ্রাতৃসংঘের তিনজন সেনেস্য এবং একজন গ্রান্ডমাস্টার’কে খুন করা হয়! কি সেই সত্য! সেই সত্যকে কি তারা শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পেরেছে?
একটা সমানবাহুর ত্রিভূজাকৃতির লেজার চাবি, একটা কি-স্টোন; যার মধ্য দিয়ে উদ্ধার করা যাবে স্যাংগ্রিল বা হলি গ্রেইল বা গোলাপ(রুপক অর্থে লাস্ট সাপারে যীশুর পান করা পেয়ালা)।
হাস্যময়ী মোনালিসা থেকে সেই লুকায়িত সত্যের জট আস্তে আস্তে খুলতে থাকবে। পপলার কাঠের উপর আঁকা মাত্র একত্রিশ ইঞ্চি লম্বা আর একুশ ইঞ্চি চওড়া, ভিঞ্চির অনন্যসাধারণ ফুমাতো স্টাইলের জন্যই মোনালিসা বিখ্যাত। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি নিজেই এটাকে তার সেরা কর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
ভিঞ্চি বাম-ডানদিকের অসমতায় যেন কোনো একটা বার্তা পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করেছেন মোনালিসার মাধ্যমে।
তার দ্য লাস্ট সাপারে যীশুর বারো জন ভৃত্যের মধ্যে তার পাশে এক রমণীকে এঁকেছেন। যিনি মারি মাগদালিন হিসেবেই সুপরিচিত। কে সেই মারি মাগদালিন!
প্রতিটা ধাঁধার মধ্য দিয়ে তিনি যেন হলি গ্রেইল’কে রক্ষা করার প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। মোনালিসা থেকে শুরু করে ম্যাডোনা অব দি রকস, দ্য লাস্ট সাপার, রোজ লাইন, জুরিখ ডিপোজিটরি ব্যাংক, শ্যাতু ভিলেত, ফ্লিট স্ট্রিট, টেম্পল চার্চ……….!
সবশেষে ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবিতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সমাধির সামনে শেষ ধাঁধায় কি সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে নাকি রোজলিন চ্যাপেল’কে ছাড়িয়ে আরও খানিকটা পথ পাড়ি দিতে হবে মি. ল্যাংডনকে!!