বেঁচে থাকার জন্য একটা সুন্দর জীবনের স্বপ্ন সবাই দেখে। জীবনের সমস্ত শিকলের বেড়াজাল ছিন্ন করে মানুষ স্বাধীনভাবে নিজেদের মতো করে বাঁচতে চায়।
নাকি অন্যরকম হয় সেই স্বাধীন সমাজ!
`অ্যানিমেল ফার্ম’-জর্জ অরওয়েলের একটি ব্যাঙ্গাত্মক রূপকধর্মী উপন্যাস। যে উপন্যাসটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু উপন্যাসের মূল কাহিনির প্লট ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের পটভূমি থেকে বিপ্লোবত্তর পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে রচিত।।
একটা পশুদের ফার্মকে ঘিরে শুরুর দিকে কাহিনি আবর্তিত হয়৷ যেখানে ফার্মের মালিক মি. জোনসের অধীনে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, গাধা, শূকর, কাক, ঘোড়া থেকে শুরু করে ভেড়া, কুকুরেরও দেখা মিলে।
মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তারা জয়লাভ করে পুরো ফার্ম থেকে মনিবকে বিতাড়িত করে নিজেদের মতো জীবনযাপন শুরু করে। একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটে।
সাতটি মূল আদেশবিধি প্রণয়ন করে `বিস্টস অব ইংল্যান্ড’ সঙ্গীতের মাধ্যমে সমস্বরে তারা নিজেদের বিধিলিপি তৈরী করে। সমতার ভিত্তিতে তাদের জীবনযাপন নির্ধারিত হয়।
কিন্তু বিপত্তি ঘটে যখন ওল্ড মেজরের মৃত্যুর পর পশুদের নেতৃত্ব দেয়া দুটো শূকর `নেপোলিয়ন আর স্নোবলের’ মধ্যে মতাদর্শের পার্থক্য ঘটে।
একটা নতুন উৎসে সবকিছু বাঁক নেয় যখন স্নোবলের দিকে নেপোলিয়নের গোপন সূত্রে পালিত নয়টি হিংস্র কুকুর তাড়া করে তাকে পুরোপুরি ফার্ম থেকে তাড়িয়ে দেয়।
নেপোলিয়ন একচ্ছত্র নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা শুরু করে।
শুরুর দিকে একটা শ্রেণি হিসেবে শূকরদের আর কুকুরদের আলাদা করা হয়। তাদের জন্য আপেল আর দুধ আলাদাভাবে রেখে দেয়া হয়, কারণ তারা সব পশুদের মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় নিয়োজিত থাকে। বাকি পশুরা তা মেনে নেয়।
এছাড়া স্নোবলের উইন্ডমিলের কাজের প্রস্তাবটা যে নেপোলিয়নের পক্ষে থেকেই ছিল এবং স্নোবল যে বিশ্বাসঘাতক তা জোরেশোরে প্রমাণ করা হয়।
এরপর সব পশুরা নির্বিবাদে নিয়মিত উইন্ডমিলের পেছনে ষোল ঘন্টা পরিশ্রম করলেও একদিন ঝড়ো বাতাসে প্রাচীরের বেধ কম হওয়ায় ভেঙে পড়ে।
নেপোলিয়ন দিনে দিনে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে।
দ্বিতীয় বছর ধরে আবারও সবাই মিলে উইন্ডমিল তৈরীর কাজ করলেও পাশের ফার্মের লোকজনের সাথে ঝামেলা হওয়ায় তারা উইন্ডমিলকে বোমা দিয়ে উড়িয়ে দেয়।
নেপোলিয়নের বিলাসী জীবনযাপনের তাতে ভাটা পড়ে না।
ফার্মের মালিককে হটিয়ে যুদ্ধের বিজয়স্বরূপ `ম্যানর ফার্ম ‘ থেকে ট্রান্সফর্ম করে `অ্যানিমেল ফার্ম’ নামকরণের মাহাত্ম্য ধীরে ধীরে চাপা পড়ে যায়।
তারা কোনো একটা ছাঁচকে ধরে আর অতীত আর বর্তমানের পার্থক্য বুঝতে পারে না। বিস্টস অব ইংল্যান্ড’ সঙ্গীত ধীরে ধীরে হারিয়ে মুখে মিলিয়ে যায়।
শুধু এক নম্বর আদেশবিধিতে `Whatever goes upon two legs is an enemy’ এর জায়গায় ` Four legs good, two legs better’ যুক্ত হয়।
সাত নম্বরে `All animals are equal’ এর জায়গায় হয়ে যায় `All animals are equal but some animals are more equal than others’।
শেষপর্যন্ত একটা পার্টিতে মানুষের সাথে শূকর নেপোলিয়নকে একসাথে দেখা যায়। যারা নতুন করে সবকিছু ভুলে পানীয় পানে মত্ত হয়ে যায়।