Search

দ্য মেটামরফোসিসঃ কাফকায়েস্কের এক অনন্য রূপ

ধরে নিই, আপনি আপনার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি; যার উপর পুরো পরিবারের ভরনপোষণ নির্ভর করছে।

একজন ছেলে হিসেবে আপনি টাকা-পয়সা দিয়ে আপনার বাবার ঋণ শোধ করার চেষ্টা করছেন, পাশাপাশি পরিবারের খরচ চালিয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করছেন।

এরপর একটা বিরাট কিন্তু আছে।

যদি আপনি কোনো কারণে আর আপনার পরিবারকে সাপোর্ট দিতে না পারেন! যদি আপনার চাকরিটা চলে যায়!
উপরন্তু আপনি আপনার পরিবারের উপর বোঝা হয়ে দাঁড়ান, তখন ব্যাপারটা কেমন হবে??
তারা কি তখনও আপনাকে আগের মতো যত্ন করবে, ভালোবাসবে?
এই প্রশ্নের উত্তর যতটা না মনস্তাত্ত্বিক, তার চেয়ে বেশী আমাদের বাস্তব জীবনের সম্পর্কের অর্থহীনতার প্রতি ইঙ্গিত করে। যা জার্মান ঔপন্যাসিক ফ্রানৎস কাফকা তার `দ্য মেটামরফোসিস’ উপন্যাসে তুলে ধরেছেন।

গল্পের নায়ক গ্রেগর সামসা, যে কিনা একজন ট্রাভেলিং সেলসম্যান হিসেবে টানা পাঁচ বছর ধরে ছুটিহীন অবস্থায় একনাগাড়ে কাজ করেছে, পরিবারের ভরনপোষণ জুগিয়েছে।

তারপর কোনো এক সকালে গ্রেগর নিজেকে আবিষ্কার করেছে এক জায়ান্ট আরশোলা হিসেবে। তার পুরো শারীরিক পরিবর্তন হয়েছে, অথচ চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা ঠিক আগের মতোই আছে।

এরপর চলে সামসা থেকে আরশোলা হয়ে নিজের চেহারার সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর দ্বন্দ্ব। পাশাপাশি পরিবারের মানুষের সাথে তার শারীরিক ও মানসিক দূরত্ব।

সামসাকে খাবার সময়টুকু ছাড়া বাকি সময় তার রুমে বন্দী করে রাখা হয়। তার কিম্ভূতকিমাকার চেহারাও ধীরে ধীরে পরিবারের লোকজনের জন্য বিরক্তিকর হয়ে উঠে। একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কিভাবে টার্ন নিয়ে তার পরিবারের কাছে মূল্যহীন হয়ে যেতে পারে, তা লেখক খুব ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

যখন গ্রেগরের রুম থেকে ওয়ারড্রব, ডেস্ক সব সড়ানো হচ্ছিল, তখন নিজের অস্তুিত্বকে প্রমাণ করার চেষ্টায় শেষ সম্বল হিসেবে তাকে তার দেয়ালের একটা ছবিকে আঁকড়ে ধরে থাকতে দেখা যায়। কারণ, মানুষ যেকোনো মূল্যে, যেকোনো রূপে তার অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়।

গল্পের চরিত্রে বাবা, মা, কাজের বুয়া, অফিসের ম্যানেজার & ডিরেক্টরের পাশাপাশি তার বোন গ্রেটাকে দেখা যায়, যে প্রথমদিকে তার যত্ন করলেও পরবর্তীতে তাকে অবহেলা করে।

সময়ের সাথে সাথে তারা চাকরি পেয়ে নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়। একসময় তাদের বাসার তিনজন ভাড়াটিয়া গ্রেগরের উপস্থিতিকে মানতে না পারায় গ্রেগর তাদের কাছে একটা বড় বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

দ্য মেটামরফোসিস। উৎসঃ লেখিকা।
গল্পের কাহিনি অন্যদিকে মোড় নেয়।

গ্রেগরের বাবা ভুল বুঝে যে আপেল দিয়ে তার দিকে ঢিল ছুঁড়ে, তাই দ্রুত তার মৃত্যুর তারিখ ঘনিয়ে নিয়ে আসে। নিজের অর্থহীনতা উপলব্ধি করে না খেয়ে খেয়ে অবশেষে গ্রেগর একদিন মারা যায়।

কেউ মারা গেলে মানুষ যে দুঃখ পায়, এখানে ঠিক তার উল্টোটা দেখা যায়। তার পরিবারের লোকজন মুক্তির আস্বাদ লাভ করে। গ্রেগরের মৃত্যুর দিনটা তাদের জন্য উৎসবের দিন হয়ে দাঁড়ায়।
লেখক এখানে দেখিয়েছেন, একটা মৃত্যু অনেকসময় কষ্টের পরিবর্তে ইতিবাচক & মানসিক প্রশান্তিরও কারণ হয়।

মার্চের শেষদিকে তার মৃত্যুর দিনে শহরের প্রান্তে ঘুরতে গিয়ে তার বাবা-মা গ্রেটাকে যেন নতুন করে আবিষ্কার করে। গ্রেটার মেটামরফোসিস ঘটে।

গ্রেটা কি গ্রেগরের মতো জায়ান্ট আরশোলায় পরিণত হয় নাকি তার পরিবর্তনই পুরো পরিবারকে নতুন এক ভবিষ্যতের আহ্বান জানায়?

জানতে চাইলে পড়ুন বিখ্যাত লেখকের বিশ্ববিখ্যাত এই উপন্যাসটি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *