একজন ছেলে হিসেবে আপনি টাকা-পয়সা দিয়ে আপনার বাবার ঋণ শোধ করার চেষ্টা করছেন, পাশাপাশি পরিবারের খরচ চালিয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করছেন।
এরপর একটা বিরাট কিন্তু আছে।
গল্পের নায়ক গ্রেগর সামসা, যে কিনা একজন ট্রাভেলিং সেলসম্যান হিসেবে টানা পাঁচ বছর ধরে ছুটিহীন অবস্থায় একনাগাড়ে কাজ করেছে, পরিবারের ভরনপোষণ জুগিয়েছে।
তারপর কোনো এক সকালে গ্রেগর নিজেকে আবিষ্কার করেছে এক জায়ান্ট আরশোলা হিসেবে। তার পুরো শারীরিক পরিবর্তন হয়েছে, অথচ চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা ঠিক আগের মতোই আছে।
এরপর চলে সামসা থেকে আরশোলা হয়ে নিজের চেহারার সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর দ্বন্দ্ব। পাশাপাশি পরিবারের মানুষের সাথে তার শারীরিক ও মানসিক দূরত্ব।
সামসাকে খাবার সময়টুকু ছাড়া বাকি সময় তার রুমে বন্দী করে রাখা হয়। তার কিম্ভূতকিমাকার চেহারাও ধীরে ধীরে পরিবারের লোকজনের জন্য বিরক্তিকর হয়ে উঠে। একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কিভাবে টার্ন নিয়ে তার পরিবারের কাছে মূল্যহীন হয়ে যেতে পারে, তা লেখক খুব ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
যখন গ্রেগরের রুম থেকে ওয়ারড্রব, ডেস্ক সব সড়ানো হচ্ছিল, তখন নিজের অস্তুিত্বকে প্রমাণ করার চেষ্টায় শেষ সম্বল হিসেবে তাকে তার দেয়ালের একটা ছবিকে আঁকড়ে ধরে থাকতে দেখা যায়। কারণ, মানুষ যেকোনো মূল্যে, যেকোনো রূপে তার অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়।
গল্পের চরিত্রে বাবা, মা, কাজের বুয়া, অফিসের ম্যানেজার & ডিরেক্টরের পাশাপাশি তার বোন গ্রেটাকে দেখা যায়, যে প্রথমদিকে তার যত্ন করলেও পরবর্তীতে তাকে অবহেলা করে।
গ্রেগরের বাবা ভুল বুঝে যে আপেল দিয়ে তার দিকে ঢিল ছুঁড়ে, তাই দ্রুত তার মৃত্যুর তারিখ ঘনিয়ে নিয়ে আসে। নিজের অর্থহীনতা উপলব্ধি করে না খেয়ে খেয়ে অবশেষে গ্রেগর একদিন মারা যায়।
মার্চের শেষদিকে তার মৃত্যুর দিনে শহরের প্রান্তে ঘুরতে গিয়ে তার বাবা-মা গ্রেটাকে যেন নতুন করে আবিষ্কার করে। গ্রেটার মেটামরফোসিস ঘটে।
গ্রেটা কি গ্রেগরের মতো জায়ান্ট আরশোলায় পরিণত হয় নাকি তার পরিবর্তনই পুরো পরিবারকে নতুন এক ভবিষ্যতের আহ্বান জানায়?