দ্য আউটসাইডার: সামাজিক বেড়াজাল ও ব্যক্তিমানবের দ্বন্দ্ব

দ্য আউটসাইডার। উৎসঃ https://media.newyorker.com/photos/5909675d019dfc3494ea0dd0/16:9/w_1280,c_limit/120409_r22060_g2048.jpg

`মা’ শব্দটার সাথে আমাদের প্রত্যেকের একটা আত্মার সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু মনে করুন, আপনার মায়ের অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ায় আপনি কাঁদছেন না। আপনার মায়ের কত বছর বয়স হয়েছে সেটাও আপনি জানেন না।

শেষবারের মতো কফিনে মায়ের মুখটাও দেখতে না চেয়ে বরং কেয়ারটেকারের সাথে বসে গরম কফির সাথে সিগারেট ফুঁকছেন।

সুদূর আলজেরিয়া থেকে ফ্রান্সের কোনো এক হোমে মা’ কে রেখে এসেছেন। অথচ মারা যাওয়ার পর শেষবারের মত কবরস্থানে বসে শোক প্রকাশও করছেন না।

তার পরেরদিন আপনি প্রেমিকা খুঁজে নিয়েছেন, তার সাথে থিয়েটারে কমেডি মুভি দেখতে গিয়েছেন।
এই কয়েকলাইন পড়েই আপনার মনে একটা জাজমেন্টাল চিন্তাভাবনা চলে আসবে। আপনি না চাইলেও আসবে।

এ কেমন ছেলে??

নিশ্চিতভাবে কুলাঙ্গার, নয়তো যার হৃদয় বলতে কিছুই নেই।
দ্য আউটসাইডার। উৎসঃ লেখক।

এই ছেলেটাকে নিয়েই গল্পের শুরু হবে। যে ছেলেটা জানে সে পৃথিবীর আর সবার মতোই সাধারণ, শুধু চিন্তাভাবনায় আর অনুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে একটু ভিন্ন।

এই ভিন্নতাই তাকে সমাজে সবচেয়ে ঘৃণিত এবং হৃদয়হীন কপটচারী হিসেবে তুলে ধরবে।
আলবেয়ার কাম্যু’ ফিলোসফিক্যালভাবে জীবনের অর্থহীনতাকে দারুণভাবে এই উপন্যাসে ফুটিয়ে তুলেছেন।

গল্পের অনেক চরিত্রের মাঝে আমাদের এক বৃদ্ধের দেখা মিলবে। যার বউ মারা যাওয়ার পর থেকে আট বছর ধরে একটা কুকুর তার অন্যতম সঙ্গী হিসেবে থাকে।

কিন্তু জীবনের যত রাগ,ক্ষোভ,ঘৃণা সবকিছুই যেন তার কুকুরটার উপরই থাকতো। সকাল এগারোটা আর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে প্রতিদিন বেড়ানোর রুটিনের মাঝে কিছু এদিক সেদিক হলেই তিনি কুকুরটিকে পেটাতেন।

এরপর একদিন প্যারেডে কুকুরটি হারিয়ে যায়। তখন বৃদ্ধের সকাতর কিছু উক্তি শোনা যায়,

I am sorry, I am sorry. Tell me, Monsieur, they will give him back to me. Otherwise what will happen to me??

বৃদ্ধের অনুতাপ, কান্না দেখে বৃদ্ধের প্রতি আপনার করুণা হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। সেটাকে মিনিমাইজ করার জন্য আবার গল্পের নায়কের সুন্দর একটা উক্তি আছে।

It was an idea of mama’s that people could eventually get used to anything.

যদিও কথাটা আপেক্ষিক।

গল্পের মোড় ঘুরে যায় যখন নায়ককে এক আরব’কে হত্যার অপরাধে জেলের কুঠুরিতে বন্দী হতে দেখা যায়।
অদ্ভূতভাবে বিচারকের জাজমেন্ট হত্যা করা থেকে শুরু হয় না, বরং শুরু হয় তার মায়ের অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া থেকে।

মায়ের মৃত্যুতে আশেপাশের মানুষ তাকে কাঁদতে দেখে নি। অথচ সে তার মা’কে অন্য সবার মতোই ভালোবাসতো।

তার প্রেমিকার প্রতি সে লয়্যাল, কাপলরা যা করে তারা তাই করে। বিয়ে করতেও প্রস্তুত। কিন্তু সে তার প্রেমিকাকে ভালোবাসে না।

সে সমুদ্র ভালোবাসে, জেলের কুঠুরিতে বসে সে সমুদ্রের কল্লোল শুনতে পায়। কুঠুরির ছিদ্র দিয়ে আকাশের গোধূলি উপভোগ করে।

অথচ সে খ্রিষ্টকে বিশ্বাস করে না। গিলোটিনের শিরোশ্ছেদ থেকে পালাবার উপায় খোঁজার পরও যার জীবনে সেরকম কোনো অনুতাপ নেই।
এরপর স্বভাবতই একটা প্রশ্ন আসে, কেন??

এই কেন’র উত্তর সহজে মিলে না।

হয়তো আমরা এর উত্তর খুঁজতে খুঁজতে হারিয়ে যাই নয়তো আমাদের চারপাশ জুড়ে আমরা নিজেরাই কখনও কখনও আউটসাইডার হিসেবে বেঁচে থাকি।

About Labonya Roy

Check Also

কবিতাঃ সোনার বাংলা

 সোনার বাংলা লেখকঃ ফাতেমা তুজ জোহুরা যুদ্ধ শেষে স্বপ্ন দেখছি সোনার বাংলা গড়ার, আমরা চলেছি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *